স্মার্টফোন ব্যাবহারে শিশুদের ক্ষতি।

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ফলে বর্তমানে এখন প্রায় সকল শিশুদের হাতে স্মার্টফোন লক্ষ করা যায়। বর্তমানে দেখা যায় বেশিরভাগ পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের হাতে অল্প বয়সেই স্মার্টফোন তুলে দেয়। আসলে স্মার্টফোন শিশুদের কতটা ক্ষতি করে থাকে তা অনেকেরই অজানা।  আমরা অনেক সময় শিশুদের কান্না থামানোর জন্য বা খাবার খাওয়ানোর জন্য তাদের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে থাকি যেটা এক সময় শিশুদের নেশায় পরিণত হয়। পরবর্তীতে সেই সকল শিশুদের স্মার্টফোন না দিলে তারা সহজে খেতে চায় না,কান্না থামে না। তাই আজকে আমি আপনাদের আজকে জানাব শিশুরা স্মার্টফোনে কেন আসক্ত হয়, স্মার্টফোন ব্যাবহারে শিশুদের কি কি ক্ষতি হয়ে থাকে এবং স্মার্টফোন থেকে বাচ্চাদের বিরত রাখার উপায় কি ইত্যাদি। তো চলুন জেনে নেই।



স্মার্টফোন ব্যাবহারে শিশুদের ক্ষতি।

বর্তমানে স্মার্টফোন ছাড়া ছেলে মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। প্রযুক্তি যেমন আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজকে সহজ করে দিয়েছে ঠিক তেমনি প্রযুক্তি অনেক সমস্যার ও সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহার করে এমন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে সাথে স্মার্টফোনে আসক্তির সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বাজারে স্মার্টফোনের দাম অনেক কম হওয়ায় প্রায় সকল পেষার মানুষ এটি সহজেই ক্রয় করতে পারেন। যার ফলে স্মার্টফোন বাজারে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এবং স্মার্টফোন সকল লোকের মাঝে বর্তমানে দেখা যায়। আমরা সবসময় প্রযুক্তির ভালো দিকটাই দেখে থাকি। কিন্তু কখনো খারাপ দিক বিবেচনা করে দেখেছেন কি? চলুন জেনে নেই স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের কিছু ক্ষতি সমূহ।

চোখের ক্ষতি করে।

আপনি হয়তো জানেন স্মার্টফোনের ডিসপ্লে তে রয়েছে ক্ষতিকারক নীল রশ্মী যা চোখের অনেক ক্ষতি করে থাকে। ছোট্ট শিশুদের  চোখ অনেক স্বচ্ছ থাকে  তাই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকে শিশুদের  চোখের ক্ষতি স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই অনেক সময় দেখা যায় স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে শিশুরা খুব অল্প বয়সেই দূরের জিনিস ঝাপসা দেখে এবং তাদের অল্পবয়সেই চশমা পরতে হয়। তাই আমাদের উচিত অল্প বয়সের শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না দেওয়া।

টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে।

আপনি জানলে অবাক হবেন যে স্মার্টফোনে এক ধরনের ক্ষতিকারক রেডিয়েশন রয়েছে। একটি স্মার্টফোন অনেকক্ষণ ব্যবহারের ফলে ব্রেইন টিউমার বা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরো জানলে অবাক হবেন যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির থেকে শিশুদের ক্ষেত্রে এই রেডিয়েশন অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কারণ শিশুদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপরিণত থাকে তাই এই রেডিয়েশনে মাধ্যমে খুব সহজেই শিশুরা আক্রান্ত হয়। তাই আমাদের উচিত শিশুদের থেকে স্মার্টফোন দূরে রাখা।


মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপে ব্যাঘাত ঘটে।

শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে আরো একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে ব্যাঘাত ঘটে। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সী শিশুদের বদমেজাজ বা পাগলের মত হয়ে যায়।

পড়াশোনার অমনোযোগী।

শিশুদের অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দিলে দেখা যায় যে সকল শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের পড়াশোনায় অমনোযোগী লক্ষ্য করা যায়। স্মার্টফোন আসক্তির ফলে শিশুরা স্মার্টফোন ছাড়া কিছুই বুঝেনা। সারাক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয় পড়াশোনা তাদের ভালো লাগে না। এবং দেখা যায় পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকে। 


শিশুরা কেন মোবাইলে আসক্ত।

শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তির পেছনে সাধারণত আমরা নিজেরাই দায়ী। কারণ শিশুরা যখন ছোট থাকে তখন শিশু একটু কান্না করলেই তার হাতে আমরা স্মার্টফোন ধরিয়ে দেই, শিশু খেতে না চাইলে তার হাতে স্মার্টফোন দিয়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করি, শিশু অতিরিক্ত দুষ্টুমি করলে তার হাতে স্মার্টফোন দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করি, যখন আমরা এরকম করতে থাকি আস্তে আস্তে স্মার্টফোনের প্রতি তার একটা ঝোঁক চলে আসে। তখন ওই শিশু স্মার্ট ফোন ছাড়া অন্য কিছুতে কান্না থামে না বা খেতে চায় না।

আরেকটা বিষয় হলো শিশু যখন ছোট থাকে তখন সে যা দেখে তাই শিখে। শিশু যখন দেখে সারাক্ষণ বাবা-মা স্মার্টফোন নিয়ে পড়ে থাকে তখন বাচ্চারা তো সেটাই শিখবে। আরেকটি বিষয় হলো আমরা যখন চাকরি বা বিভিন্ন কারণে বাচ্চাদের সময় দিতে পারি না। তখন আমরা সাধারণত ছেলেমেয়েদের স্মার্ট ফোন ধরিয়ে দেই এবং আমরা আমাদের কাজে ব্যস্ত থাকি। এভাবে আমরা আমাদের নিজেদের অজান্তেই  আমাদের শিশুদের মোবাইলে বা স্মার্টফোনে আসক্তি করে ফেলি।



স্মার্টফোন থেকে শিশুদের বিরত রাখার উপায়?

ছোটবেলা থেকেই কোন শিশু জানেনা যে একটি স্মার্টফোন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কিভাবে গান বাজাতে হয়, কিভাবে ভিডিও দেখতে হয়, কিভাবে কার্টুন দেখা যায়। এগুলো তাদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা যতক্ষণ না পর্যন্ত পরিবারের কোনো ব্যক্তি তাদের সেগুলো শেখাচ্ছে। তাই শিশুদের থেকে স্মার্টফোনকে দূরে রাখতে হলে প্রথমে পরিবারের লোকজনকে আগে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

বেশিরভাগ পরিবারই দেখা যায় বাচ্চাদের সামনে বড়রা স্মার্টফোনে ফেইসবুকিং, ইউটিউব বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি চালায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় স্মার্টফোনে কল আসলে শিশুদেরকে দিয়ে কথা বলানো হয়। এবং শিশু এগুলো দেখে অনেক আনন্দিত হয় এবং এটি শিশুরা খুবই উপভোগ করে। এভাবেই স্মার্টফোন এর প্রতি একটি শিশুর আসক্তি বেড়ে যায় সে বুঝতে পারে ফোন দিয়ে কি হয় এবং এগুলো দেখে দেখেই শিশুরা এগুলো শেখে। 

তাই শিশুদের থেকে ফোনকে দূরে রাখার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন তা নিচে দেয়া হল।

  • শিশুদের সামনে স্মার্টফোন  নিয়ে না যাওয়া বা না দেখানো, যতটা সম্ভব শিশুদের থেকে স্মার্টফোনকে দূরে রাখা। এতে করে স্মার্টফোন সম্পর্কে শিশুদের এতটা ধারণা থাকবে না।
  • বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানোর জন্য কার্টুন দেখাবেন না বা কান্না থামানোর জন্যে স্মার্টফোন হাতে ধরিয়ে দিবেন না। 
  • বাচ্চাদের বেশি করে সময় দিন তাদের সাথে থাকুন তাদের সাথে খেলা করার চেষ্টা করুন।
  • বাচ্চাদের মজার মজার গল্প বলুন পারলে বাচ্চাদের গল্পের বই কিনে আনুন এবং সেগুলো পড়ে শোনান
  • বাচ্চাদের বিভিন্ন ছড়া গান এগুলো আবৃত্তি করে শোনান। বাজারে বিভিন্ন রকম ছড়ার বই কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো তাদের পড়ে শোনান।
  • এখন বাজারে বিভিন্ন রকম শিক্ষামূলক নানা ধরনের খেলনা কিনতে পাওয়া যায় এগুলো কিনে বাচ্চাদের খেলতে দিন। 
  • বিকেলবেলা শিশুদের খেলতে দিন অথবা নিজেরা মাঠে খেলতে নিয়ে যান। 
আশা করি এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করলে শিশুদের স্মার্টফোন থেকে যে আসক্তি রয়েছে সেটি দূর হয়ে যাবে। তাই আমাদের নিয়ম অনুযায়ী যে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত কখনো প্রযুক্তি নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়। কোন প্রযুক্তিকেই নেশায় পরিণত করা স্বাস্থ্যের বা নিজেদের জন্য ভালো নয়। আজকে এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আবার ফিরে আসবো নতুন কোনো টপিক নিয়ে সেই পর্যন্ত sohojtech এর সাথেই থাকুন।

আরো পড়ুন

ধন্যবাদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ